কয়দিন পরেই তো ঈদ, দেশের গ্রাম আর নগরীর বুকে উৎসবের আগমনবার্তা টের পাওয়া যাচ্ছে বেশ। সামর্থ্যবানদের ঘরে ঘরে আয়োজনের হৈচৈ শুরু হয়েছে আরো আগেই। কারো ঘরে কেনাকাটার পাট চুকেও গেছে, কারো ঘরে এখনো চলছে একটু একটু করে। কোন ঘরে আবার এখনো শুরু হয়নি ইদ আয়োজন, তবে হয়ে যাবে জলদিই। এই কেনাকাটার উৎসবটাও যে ঈদের খুশির জানান দিয়ে যায় অনেকটাই।
কিন্তু তেমন ঘরগুলোতে কী অবস্থা এখন, যাদের প্রতিদিনের খাবার জোটাতেই হিমশিম খেতে হয়? সেই বাচ্চাটা, যার একটাও কাপড় নেই গা ঢেকে রাখার জন্য, তার কী হবে? জানি, বলবেন যে সবারটা দেখা তো আপনার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু কে বলেছে যে সবারটা আপনি দেখবেন? কোন একজনের সামান্য একটু দেখাশোনাই করুন না এবার, তাতেই তো একেবারে কম করা হচ্ছে না!
নির্ধারিত যাকাত বা ফিতরার বাইরে দুস্থ কারো জন্য সম্পূর্ণ নিজের মন থেকে কিছু করেছেন কখনো? বা ঈদের সময়? না করলে তবে একবার করেই দেখুন, কেমন শান্তি পাবেন আপনি।
বাসার পরিচারিকার জন্য নিয়মমাফিক কাপড়টা, জুতোটা কিনে এনেছেন। তার জন্য শখের কোন অনুষঙ্গও তো আনতে পারেন সাথে, বা একটা দুটো প্রসাধনী যা হয়তো সে মনে মনে চেয়েছিলো। আপনার ঈদ হবে সাধের, চোখের সামনে থেকে তার ঈদ হবে নিতান্তই প্রয়োজনের, এমনটা নাও তো হতে দিতে পারেন আপনি।
ঈদের দুদিন আগে সময় করে নিজের ঘরের আশেপাশে থাকা দুই/চারজন বাচ্চাকে ডেকে নিতে পারেন, যারা সারাদিন রাস্তা্র ময়লায় গড়িয়ে আর খেলে বেড়ায় বলে আপনিই বিরক্ত হতেন। নতুন কাপড় যাদের কাছে ডুমুরের ফুল, ঈদ যাদের কেবলই অন্য একটা দিন। ছোট কিছু উপহারই তুলে দিন না হাতে। যতোটা সম্ভব আপনার পক্ষে। একসাথে নিয়ে বসে পিচ্চিগুলোর হাতে দিয়ে দিতে পারেন মেহেদি। একটাদিন একটু সময় যাবে আপনার, কিন্তু উচ্ছ্বাসের কেমন আভা তাদের ছোট্ট চোখের তারায় চমকাবে, নিজের চোখটা একবার বন্ধ করে ভেবে নিন তো।
রোজ যে বুড়িটা ভিক্ষা করে বেড়ায় আপনার এলাকায়, কোনদিন নিজের হাতেই যাকে টাকা দিয়েছেন আপনি, সামর্থ্য থাকলে একটা শাড়ি কিনে দিন তাকে এই ঈদে। দিতে হবে বলে নয়, মন টানলে তবেই তো দেবেন। তাই দায়সারা যাকাতের কাপড় থেকে বেছে না নিয়ে পছন্দ করে ভালো একটা শাড়িই কিনুন। খুব বাহুল্য মনে না করলে যার জন্য এমন পোশাক কিনবেন, সাথে এক জোড়া জুতোও কিনে দিতে পারেন। মন থেকে আসা অনেকগুলি শুভকামনা জমা হবে আপনার ঝুলিতে, খুশি হবেন না তাতে আপনি?
পথশিশুদের নিয়ে, বা উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীর ঈদ পালনের সামান্য আয়োজনটুকু নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সংগঠন কাজ করে থাকে। অনেক ইভেন্ট হয়, নানা রকমের আয়োজন থাকে। কাজ করতে পারেন তেমন কোন দলের সাথেও। ওই মানুষগুলোর জন্য কিছু করতে পেরে আপনার ঈদের খুশি বেড়ে যাবে বহুগুণে, করেই দেখুন একবার।
সবশেষে কিছু কথা, যা এখানে বলা প্রয়োজন। কাউকে উপদেশ দিয়ে এমন কোন কাজ করানোটা সম্ভবও নয়, তা মানায়ও না। কথাগুলি সেসকল মানুষের জন্য যারা মন থেকে এমন কিছু করবেন বলে ভাবেন, হয়তো কোন কারনে আগে করা হয়নি কিন্তু এবার যাত্রা শুরু করবেন ভেবেছেন। সত্যিকারের হাসিখুশি ভরা জীবনের পথে আপনার যাত্রা শুভ হোক!