বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)'র মহা জীবন আলেখ্য ভিত্তিক ছায়াছবি চলতি মাসেই ইরানসহ সারা বিশ্বে মুক্তি পেতে যাচ্ছে। এ ছায়াছবি পরিচালনা করেছেন ইরানের খ্যাতনামা চলচ্চিত্র নির্মাতা মাজিদ মাজিদি।
২৬ আগস্ট নবীবংশের অষ্টম পুরুষ ইমাম রেজা (আ.)'র জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ইরানে এ ছায়াছবি মুক্তি পাবে। এ ছাড়া, কানাডার মন্ট্রিয়ল বিশ্ব চলচ্চিত্র উৎসবে মুহাম্মদ (সা.) নামের ছবিটির প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠিত হবে ২৭ আগস্ট।
মহানবী (সা.) কে নিয়ে নির্মিত তিন-খণ্ডের ছায়াছবির এই প্রথম খণ্ডে তাঁর মক্কার জীবনের ঘটনাবহুল নানা কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। ১৭১ মিনিটের এ ছায়াছবি নির্মাণে পাঁচ বছর সময় লেগেছে। ইরানের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল এ ছবি নির্মাণে ৫৫ কোটি ডলার ব্যয় হয়েছে। মোহাম্মদ মাহদি হায়দারিয়ান প্রযোজিত এ ছবির চিত্র ধারণ করা হয়েছে ইরান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার শহর বেলা-বেলা’তে।
ছবিটি নির্মাণে চলচ্চিত্র জগতের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্বরা সহযোগিতা করেছেন। এতে কাজ করেছেন ইতালির সিনেমাটোগ্রাফার ভিত্তোরিও স্তোরারো, ইতালির ফিল্ম এডিটর রোবাতো পেরপিগানি, মার্কিন স্পেশাল এফেক্ট শিল্পী স্কট-ই অ্যান্ডারসন, ইতালির মেকআপ আর্টিস্ট গিয়ানেত্তো ডি রোসি এবং ভারতের বিশ্ববিখ্যাত সুরকার ও সঙ্গীত প্রযোজক এ আর রহমান। এরই মধ্যে বিশ্বের অনেক দেশ ঐতিহাসিক এ ছবিটি কেনার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছে।
বিশ্বের বহু দেশ, ব্যক্তিত্ব ও চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা ইরানের নির্মিত ছায়াছবির ব্যাপক প্রশংসা করলেও এ ছবি নির্মাণের বিরুদ্ধে কোনো কোনো মহল প্রতিবাদ জানিয়েছে। অনেকের অভিযোগ এ ছবিতে বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)’র মুখমণ্ডল দেখানো হয়েছে। অথচ এ অভিযোগ মোটেও সত্য নয়।
তবে সমালোচকদের জবাবে সম্প্রতি ছবিটির মুক্তি বিষয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মাজিদি বলেছেন, আমরা মুহাম্মদ (সা.)’র জীবনের এমন একটা সময় তুলে ধরতে চাই যা নিয়ে শিয়া এবং সুন্নি পণ্ডিতদের মধ্যে কোনো বিতর্ক নেই। আমরা চাই সেই সময়ের ধারণা দিয়ে মুসলিম বিশ্বে ঐক্যের বাণী প্রচার করতে।
কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, আমি এবং আমাদের দলের লক্ষ্য ছিল একটাই। আমরা মোহাম্মদ সম্পর্কে ও তার প্রচারিত ইসলাম সম্পর্কে সবাইকে সঠিক ধারণা দিতে চেয়েছি। আমরা সবাইকে ইসলামের সৌন্দর্য সম্পর্কে বলতে চেয়েছি। কারণ বর্তমান বিশ্বে ইসলাম সম্পর্কে বিরূপ ধারণার সৃষ্টি হয়েছে। মহানবীর জীবন আদর্শ জানাতেই তৈরি করা হয়েছে এ ছবি।
মহানবীর বাণী এবং তার জীবন দর্শন সবার কাছে পৌঁছে দিতে রূপালী পর্দাই হতে পারে বড় মাধ্যম - এমনটাই মন্তব্য করছেন ছায়াছবির নির্মাতা মাজিদ মাজিদি। যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, যে কোনো ইসলামিক দেশ নবীর জীবন নিয়ে কাজ করতে চাইলে আমি তাতে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো। কারণ নবীর জীবনের সঠিক প্রচার হওয়া উচিৎ। তার জন্য ফিল্ম হতে পারে বড় মাধ্যম। আর আমি যেহেতু একটি ইসলামিক দেশের প্রতিনিধি এবং সেই সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠেছি, আমি জানি কীভাবে নবীর সম্মান অক্ষুণ্ণ রেখে তার প্রচার সম্ভব।
তিনি আরো বলেন, নবীজী ছিলেন দয়ার সাগর। তার বার্তা সঠিকভাবে পৌঁছানো হচ্ছে না। যেখানে ঈসা (আ.) কে নিয়ে ২৫০ ফিল্ম, মুসা (আ.) কে নিয়ে ১২০, অন্য নবীদের নিয়ে ৮০ এবং বুদ্ধকে নিয়ে প্রায় ৪০টির মতো ফিল্ম নির্মিত হয়েছে, সেখানে মহানবীকে নিয়ে ইরানে প্রথম এ ধরণের একটি ছবি তৈরি হলো। এতদিন এ বিষয়ে ছবি তৈরি না হওয়াতে আমরা পশ্চিমা বিশ্বকে নবীর সঠিক বাণী জানাতে পারিনি। এতে করে শত্রুরা শত্রুই রয়ে গেছে। মাজিদি বলেন, মহানবীর জীবনআদর্শ সবার কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরতেই নির্মিত হয়েছে ছবিটি।
ছবিটি নিয়ে সর্বশেষ বক্তব্যে মাজিদি জঙ্গি এবং পশ্চিমা বিশ্বের প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে মহানবীর চরিত্র ভুলভাবে উপস্থাপনার অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, মুহাম্মদ (সা.) নিয়ে চলচ্চিত্র বিশ্ব মানবের কাছে মহানবীর প্রকৃত চরিত্র ফুটিয়ে তুলবে আশা করি।
মুভিটি ইতোমধ্যেই বিশ্বের অনেকগুলো দেশ কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তুরস্কসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশ এ সিনেমার জন্য মাজেদ মাজিদির প্রশংসা করেছেন।
তুর্কি সংবাদ সংস্থা আখবারে মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে তৈরি ছবিটি নিয়ে একটি কলাম লেখেন তুরস্কের দার্শনিক খাইরুদ্দিন কিরামান। কলামে তিনি সিনেমার পরিচালক মাজেদ মাজিদিকে সফল হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি লেখেন, এটি সময়োপযোগী একটি উদ্যোগ। সারা বিশ্বেই বর্তমানে এর চাহিদা তৈরি হয়েছে। তিনি লিখেছেন, বর্তমান সময়ে যুব সমাজকে অশ্লীলতা থেকে মুক্ত করতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।